ক্লাউড-সার্ভিসক্লাউড-সার্ভিস

ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইট লাইভ করতে হলে হোস্টিং আবশ্যক। নতুন ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অথবা ইতিমধ্যেই আছে, এমন ওয়েবসাইট এর ক্ষেত্রেও সঠিক হোস্টিং নির্বাচন করা জরুরি। হোস্টিং সম্পর্কে ব্যাসিক জানা না থাকলে বেশিভাগ ক্ষেত্রেই ভালো সার্ভিস পাওয়া যায় না এবং ওয়েবসাইট এর প্রয়োজনে কখন হোস্টিং প্যাকেজ পরিবর্তন করা উচিৎ, তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ওয়েবসাইট হোস্টিং এর প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে আজকের এই লেখা টি সাজানো। আশা করি, আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক হোস্টিং নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটি সাহায্য করবে।

ওয়েবসাইট হোস্টিং কি?

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে হোস্টিং সার্ভিস আসলে কি? কিভাবে হোস্টিং কাজ করে?

যে কোনো ওয়েবসাইট কোনো না কোনো সার্ভারে থাকে। সার্ভার হলো মুলত: একটি শক্তিশালি কম্পিউটার, যার কাজই হলো বিশেষ কোনো কাজ সম্পাদন করা এবং সার্ভ করা। সার্ভার বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে এখানে আমরা আলোচনা করছি ওয়েব সার্ভার নিয়ে। ওয়েব সার্ভার এর কাজই হলো ওয়েবসাইট এর ফাইল সংরক্ষন করা এবং তা ভিজিটরদের কাছে পৌছে দেওয়া। এই ওয়েব সার্ভার এর কাজটিকেই ওয়েব হোস্টিং ও বলা হয়। হোস্টিং সার্ভিস সাধারনত কোনো হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার দিয়ে থাকে। সেই সার্ভিসেই ওয়েবসাইটের সব ফাইল যেমন, টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও ইত্যাদি থাকে।

ওয়েব হোস্টিং বলতে মুলত ওয়েবসাইট হোস্টিং এর কাজে যেই সার্ভার কাজ করে এবং যেই প্রোভাইডার এই সার্ভিস দিয়ে থাকে তাকে বোঝায়। আর এই সার্ভার গুলো যেই লোকেশনে থাকে, তাকে ডাটাসেন্টার বলে।

ওয়েব হোস্টিং এর প্রকারভেদ

ওযেবাসাইট হোস্টিং বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এগুলো নিয়ে আমি আগেই আলোচনা করেছি। এই প্রকারভেদ গুলোর লিংক ভিজিট করে আপনি সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন:

১. শেয়ার্ড হোস্টিং

২. ভিপিএস হোস্টিং

৩. ডেডিকেটেড হোস্টিং

৪. ক্লাউড হোস্টিং

ওয়েব হোস্টিং এর বিভিন্ন ফিচার

যে কোনো হোস্টিং প্যাকেজ নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আপনার লক্ষ করা উচিৎ, কোনটার কাজ কি, তা দেখে নিন:

নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ

হোস্টিং এর নেটওয়ার্ক কানেকশন স্পিড হলো এর ব্যান্ডইউথ। অনেক সময় হোস্টিং কোম্পানি মোট ডাটা লিমিটেশনকে ব্যান্ডউইথ হিসেবে চালালেও তাদের নেটওয়ার্ক স্পিড এর বিষয়ে পরিষ্কার হয়ে নেওয়া ভালো। নেটওয়ার্ক স্পিড যত বেশি হবে, আপনার ওয়েবসাইটে একসাথে তত বেশি ভিজিটর হ্যান্ডেল করতে পারবেন।

ডাটা স্টোরেজ/ ডিস্ক স্পেস

হোস্টিং প্রোভাইডার আপনাকে কতটুকু ডাটা বা ফাইল স্টোর করতে দিবে তার লিমিটেশন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। আজকাল বিভিন্ন কোম্পানিতে আনলিমিটেড ডিস্ক স্পেস অফার দেখা গেলেও একটি নির্দিষ্ট সীমা পার হয়ে গেলে তারা আপনাকে না জানিয়েই আপনার সার্ভিস বন্ধ করে দিতে পারে। তাই আমার মতে আনলিমিটেড স্টোরেজ এর চেয়ে যেসব প্যাকেজ এ স্টোরেজ স্পেস নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে সেগুলো নেওয়াই ভালো।

কাস্টমার সাপোর্ট

হোস্টিং সার্ভিস এর ক্ষেত্রে কাস্টোমার সাপোর্ট ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা উচিৎ। ওয়েবসাইট চালানোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যায় পড়লে কি ধরনের সাপোর্ট পাবেন, হোস্টিং প্যাকেজ নেওয়ার আগে এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া উচিৎ।

ডোমেইন

আপনার ওয়েবসাইট যেই অ্যাড্রেসে মানুষ ভিজিট করবে, সেটিই হলো ডোমেইন। ডোমেইন কে আপনার ওয়েবসাইট এর ঠিকানা হিসেবে তুলনা করা যায়। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, facebook.com অ্যাড্রেসটি হলো ডোমেইন, এবং এই ডোমেইন ভিজিট করলে যা দেখায়, সেগুলো হোস্টিং এর অন্তর্ভুক্ত। ডোমেইন নেওয়ার সময় আপনি ডোমেইন এর ফুল কনট্রোল পাবেন কি-না এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।

এসএসএল সার্টিফিকেট

এসএসএল সার্টিফিকেট কি– এ নিয়ে আমার বিস্তারিত লেখাটি পড়ে নিন।

ইমেইল

ওয়েবসাইট ও ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইমেইল অনেক প্রয়োজনিয় টুলস। তাই এই সার্ভিসটিও আপনি হোস্টিং এর সাথে পাবেন- কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

আপটাইম

ওয়েবসাইট এর আপটাইম এর ওপর অনেককিছু নির্ভর করে। আপটাইম বলতে অনলাইনে থাকা বোঝানো হয়েছে। বেশিভাগ হোস্টিং কোম্পানিই ৯৯.৯% আপটাইম অফার করে থাকে। অনলাইনে হোস্টিং কোম্পানি গুলোর রিভিউ পড়ে তাদের প্রকৃত আপটাইম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে সার্ভিস নেওয়া উচিৎ। ওয়েবসাইট এর আপটাইম কমে গেলে তা বিভিন্ন ভাবেই নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।

ব্যাকআপ

ডাটা নিরাপত্তার জন্য ব্যাকআপ থাকা আবশ্যক। যে সকল হোস্টিং কোম্পানির ব্যাকআপ সার্ভিস একেবারেই নেই, তাদের পরিহার করাই ভালো। অতিরিক্ত ফি দিয়ে হলেও হোস্টিং কোম্পানির ব্যাকআপ সার্ভিস নিয়ে নিন। এরপরও মেনুয়ালি নিয়মিত ভাবে তথ্য নিজের কাছে ব্যাকআপ রাখুন।

ওয়েবসাইট হোস্টিং এর দাম

হোস্টিং প্যাকেজ এর দাম সার্ভিসের কোয়ালিটির সাথে ওঠানামা করে। খুব কম দামে ভালো সার্ভিস আশা করা টা বোকামি। তাই ভালো সার্ভিস পেতে হলে অবশ্যই কিছু রিসার্চ করে, রিভিউ দেখে ভালো কোম্পানি থেকেই হোস্টিং নেওয়া উচিৎ। বেশ কয়েকটি কোম্পানির প্যাকেজ এর দাম এবং অন্যান্য ফিচার তুলনা করে আপনি প্যাকেজ নির্বাচন করতে পারেন। তবে, সাধারনত মানসম্মত হোস্টিং প্যাকেজ আপনি মাসিক ২০০-২৫০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন (ব্যাসিক প্যাকেজ এর ক্ষেত্রে)।

ওয়েবসাইট এর জন্য হোস্টিং নির্বাচনের ক্ষেত্রে আশা করি এখন আপনি কিছুটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন। হোস্টিং সার্ভির নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাকে জানাতে ভুলবেন না!

By রাইসুল মুশফেক

টেক লাইফ নিয়ে সাজানো এই ব্লগে আপনাকে স্বাগতম। উপস্থাপিত বিষয়সমুহে আপনাদের কিছুটা সাহায্য করতে পারলেও আমি আনন্দিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *