কেন ছাত্রাবস্থাতেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা বুদ্ধিমানের কাজ ?

লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায় কি না এ নিয়ে আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন আসে।আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, ছাত্রাবস্থাতে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করাটাই সবচেয়ে ভালো। এ সময়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলে তা পার্ট টাইম কাজ হিসেবেই নিতে হবে। ছাত্র থাকাকালীন সময়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার অনেক সুবিধাগুলোর মধ্যে পাঁচটি বিশেষ সুবিধা আমরা এখানে তুলে ধরেছি।
১. অতিরিক্ত আয়ের পথ
বর্তমানে বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ সাধারনত পিতা-মাতা দিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে অন্যান্য উন্নত দেশের ন্যায় লেখাপড়ার পাশাপাশি সরাসরি পার্ট টাইম চাকুরি করার সুযোগ খুবই কম। তাই লেখাপড়া ও অন্যান্য খরচ যোগাতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী টিউশনি বেছে নেয়। তবে টিউশনি সবসময় সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং আমার মতো অনেকেরই টিউশনি পড়াতে তেমন আগ্রহ থাকে না। সে ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং এক অন্যতম আয়ের মাধ্যম হতে পারে। অনেকের অভিযোগ আছে লেখাপড়ার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করলে ফ্রিল্যান্সিংএ বা লেখাপড়ায় সময়ের ঘাটতি পড়ে, আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে পারি এটা একদমই ভূল ধারনা। কারও যদি সত্যিই ইচ্ছা থাকে তাহলে অন্যান্য দিকে নষ্ট করা সময়ের পরিমান কমিয়ে খুব সহজেই লেখাপড়া ও ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া সম্ভব।
২. নিজের ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার সুযোগ
সবারই উচিত নিজের পছন্দমতো কোনো কাজকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া। এ সম্পর্কে জর্জ বার্নার্ড শ এর একটি উক্তি হলো “Happy is the man who earns his living by his hobby” অর্থাৎ নিজের শখের কাজ করে যে ব্যাক্তি জীবন ধারন করে সে-ই প্রকৃত সূখী। ছাত্র হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে পরিবার চালানোর মতো কোনো চাপ নেই ফলে এ সময় কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন কিছু পরীক্ষা করে নিজের পছন্দমতো সেক্টরে কাজ বেছে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যে কোনো কিছু নিয়ে বেশ কিছুদিন কাজ করার পর যদি কাজটিকে আসলেই তার ভালো না লাগে তাহলে সহজেই সে নতুন কিছু শিখে নতুন সেক্টরে কাজ শুরু করে দিতে পারে। এটিই হলো ছাত্রাবস্থায় ফ্রিল্যান্সিং এর আসল সুবিধা।
৩. অভিজ্ঞতা অর্জন
লেখাপড়ার পাশাপশি যে কোনো পার্ট টাইম কাজ করার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ অভিজ্ঞতা অর্জন। এ ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং করাটা খুবই ভালো একটি উপায়। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সার নিজের কাজের ক্ষেত্র অনুসারে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে থাকে এবং এসব মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ছোট-বড় কোম্পানী বা ক্লায়েন্টের সাথে তাকে কাজ করতে হয়। এতে করে বাস্তব জীবনে কাজের ক্ষেত্র সম্পর্কে কিছুটা হলেও তার ধারনা আসে। এছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এর ফলে তার প্রফেশনাল লাইফের ভিত্তি মজবুত হয়। এ ধরনের পার্ট টাইম কাজের ফলে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন হয় যা পরবর্তিতে অনেক কাজে লাগে।
৪. নিজেই নিজের বস হওয়া
যে কোনো ব্যাবসায় একজন বস যে রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সারের নিজেরই সেই সকল সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন: মাসিক আয় এর লক্ষ্য কত, কখন ছুটি খাওয়া যায়, কোন প্রজেক্টে কাজ করবো অথবা কোথা থেকেই বা কাজটি করবো এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আর পাশাপাশি লেখাপড়াও ভালোভাবে চালিয়ে নেওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে আপনার কোনো বস নেই, আপনি নিজেই নিজের বস। অনেকে প্রোগ্রামিং করতে ভালোবাসে, কেউ আবার আর্টের দিকে আগ্রহ, এছাড়া এমন অনেকেই আছেন যারা সবসময় কম্পিউটারেই সময় কাটান কিন্তু এই সময়টা কোনো অর্থপূর্ন কাজে ব্যায় করতে চান- এমন যে কোনো ক্ষেত্রেই আপনি সহজেই এসব সম্পর্কিত কাজ শিখে তা মার্কেটপ্লেসে করতে পারেন।
৫. অভিজ্ঞতা ছাড়াই কাজ!
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভবত শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিংই একটি সেক্টর যেখানে অভিজ্ঞতা ছাড়াও শুধু দক্ষতা দিয়েই ভালো আয় করা সম্ভব। আর লেখাপড়া শেষ করেও যদি আপনি ফ্রিল্যান্সিংকে আপনার ফুল টাইম ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে সাধারন একটি চাকুরির চেয়ে বেশ ভালো আয় করা সম্ভব। ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে একদম প্রফেশনাল ভাবে শুরু করতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। আপনি যে সেক্টরে কাজ করতে চাচ্ছেন সেই কাজ এর খুটিনাটি বিষয়গুলো আপনার জানা থাকলেই চলবে। অনেক সময় ক্লায়েন্ট বিশেষ করে নতুন ফ্রিল্যান্সার খুঁজে থাকে কেননা তারা কাজটি করার জন্য অনেক পরিশ্রম আর সময় দিতে আগ্রহী। আর একবার ভালোভাবে কাজ শেষ করতে পারলে ধীরে ধীরে এমন সময় আসবে যে আপনাকে আর কাজের জন্য বসে থাকতে হবে না, কাজই আপনাকে খুজে নিবে।
তাই আর দেরি না করে আপনার ভালো লাগা যে কোনো কাজ ভালোভাবে শিখে নেমে পড়ুন ফ্রিল্যান্সিংএ। যদি সত্যিই দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেন আপনাকে আর পকেট খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না বরং চাইলে বাসার খরচেও সাহায্য করতে পারবেন অনায়াসেই। এই লেখা টির জন্য কৃতজ্ঞতা মাইসিস ইন্সটিটিউট অফ আইটির।
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্টে লিখুন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তার উত্তর দেবার চেষ্টা করবো।