একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে যেমন পরিশ্রম হয়, ওয়েবসাইট মেইনটেইন করার জন্যও ঠিক তেমনটি অথবা তার চেয়েও বেশি সময় দিতে হয়। ওয়েবসাইট অপটিমাইজেশন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ভালো ফলাফল পেতে সবসময় ওয়েবাসাইট অপ্টিমাইজেশনে লেগে থাকতে হবে। ২০১৯ সালে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করার লক্ষ্যে নিচে দেওয়া বিষয় গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এই ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজেশন গাইড ব্যাবহার করে আপনার ওয়েবাসইটের আরও ভালো ফলাফল নিশ্চিত করতে পারবেন।
১. অ্যানালিটিক্স এর দিকে নজর দেওয়া
ওয়েবসাইটে আপনার ভিজিটর কিভাবে ওয়েবাসাইট ব্যাবহার করছে। কোথা থেকে কি পদ্ধতির মাধ্যমে ভিজিটর বেশি আসছে এ বিষয়গুলো সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। ওয়েবসাইট অ্যানালিটিক্স নিয়মিত পূর্বের মাস ও পূর্বের বছরের সাথে তুলনা করে কোন পরিবর্তনের জন্য ফলাফল কি হয়েছে তা বুঝে নিতে হবে। ওয়েবসাইট অ্যানালিটিক্স ই ওয়েবমাস্টার এর সবচেয়ে বড় বন্ধু।
২. পূর্বের কন্টেন্ট নিরীক্ষণ করা
কনটেন্ট মার্কেটিং এর মূল হাতিয়ার হলো কনটেন্ট। ওয়েবসাইটের শুরু থেকেই আপনি নিয়মিত ওয়েবসাইটে কনটেন্ট প্রকাশ করে আসছেন। কিন্তু শুরুর পর থেকে আপনার ব্যাসায়িক লক্ষ্য বা ওয়েবসাইটের লক্ষ্য পরিবর্তন হয়ে গেলেও পূর্বের কন্টেন্ট কি তার সাথে মিল আছে? আপনার পূর্বের কনটেন্ট গুলো থেকে কোন ধরনের কনটেন্ট কার্যকর বেশি, সেই ধারনা নিতে পারবেন। শুরু থেকে পোস্ট করা কনটেন্ট গুলো নিরিক্ষণ করে তাই অনেক কিছুই শেখা ও জানা সম্ভব।
৩. ইউজার টেস্টিং করা
আপনার ওয়েবসাইটের কোন যায়গায় কি আছে, কোথায় কোন বাটন – তা আপনার ভালোভাবে জানা থাকলেও আপনার ওয়েবসাইটে আসা নতুন ভিজিটররা কি সহজে সবকিছু পাচ্ছে? ইউজার টেস্টিং এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট ভিজিটররা ঠিক কি দেখছে ওয়েবসাইটে এসে, কোন বিষয়গুলো তাদের কাছে সহজে প্রকাশ পাচ্ছে না বা তারা খুঁজে পাচ্ছে না- তা জানা যায়। ইউজার টেস্টিং এর সময় মোবাইল ইউজার টেস্টিং করাও গুরুত্বপূর্ণ কেননা বর্তমানে অর্ধেকেরেও বেশি ভিজিটর মোবাইল থেকেই ইন্টারনেট ব্যাবহার করে।
৪. পূর্বের তথ্যপূর্ণ কনটেন্ট পূনরায় ব্যাবহার করা
পূর্বের কনটেন্ট নিরীক্ষণ করে আপনি এমন অনেক কনটেন্ট পাবেন যেখানে আরও পরিবর্তন ও সংযোজন এর সুযোগ রয়েছে। আপনি এবং আপনার মার্কেটিং টিম অনেক কষ্ট করে ওয়েবসাইটের শুরু থেকেই বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করে আসছেন। সেই তৈরি করা কনটেন্ট এর মধ্যে থেকেই বেছে নিয়ে বর্তমান সময়ের জন্য আপডেট করে সেই কনটেন্ট প্রকাশ করতে পারেন। এছাড়া একাধিক কনটেন্ট একত্র করে একটি ফ্রি শর্ট কোর্স বা নিউজলেটার হিসেবে তৈরি করে আপনার ভিজিটরকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষে পৌছাতে সাহায্য করতে পারেন। এভাবে আপনার পুরোনো ভিজিটর যেমন পূর্বের কনটেন্টের নতুন সংস্করণে উপকৃত হবে, তেমনি নতুন ভিজিটররাও আপনার আগের রিসোর্স গুলোর সাথে পরিচিত হবে!
৫. হোমপেজে পরিবর্তন আনা
হোমপেজ এর কাজ হলো ভিজিটর এর কাছে আপনার ব্যাবসার প্রথম পরিচয় বহন করা। হোমপেজে নিচের বিষয় গুলো অবশ্যই থাকতে হবে:
- কাস্টমার কেন আপনার সাথে লেনদেন করবে? (সময়/অর্থ দিয়ে)
- প্রফেশনাল ও আধুনিক ডিজাইন হতে হবে।
- ভিজিটরদের কমন প্রশ্নের উত্তর থাকতে হবে।
- হোমপেজ থেকে ভিজিটরদের কোথায় যেতে হবে তা হোমপেজ থেকেই স্পষ্ট বুঝতে পারতে হবে।
ওয়েবসাইট এর হোমপেজ থেকে অন্যান্য প্রয়োজনিয় অংশে ব্রাউজ করার জন্য সহজ অপশন থাকতে হবে। কোথায় কি পাওয়া যেতে পারে তার আইডিয়া যেন ভিজিটর সহজেই পেয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. কল টু একশন এ পরিবর্তন আনা
ওয়েবসাইটের সব পেজ এবং কনটেন্ট এর কোনো না কোনো একশন লক্ষ্য থাকতে হবে। অর্থাৎ সেই পেজ থেকে ভিজিটর কোথায় যাবে- বা কি করবে। ভিজিটরকে কোনো একশন নিতে অনুপ্রাণিত করাকেই কল টু একশন বলে। এ ক্ষেত্রে ঠি কি করতে হবে সেই বিষয়টি ভিজিটর এর কাছে পরিষ্কার থাকতে হবে। এনালিটিক্স এর মাধ্যমে আপনি ভিজিটর এর কল টু একশন অনুযায়ী কি করছে তা দেখতে পারবেন। কতজন লিংক বা বাটনে ক্লিক করছে, কোন যায়গায় লিংক বা বাটন থাকলে কাজ ভালো হচ্ছে, এই বিষয়গুলো সময় নিয়ে টেস্টিং এর মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে।
৭. প্রোডাক্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তা ঠিক করা
এ ক্ষেত্রেও অ্যানালিটিক্স আপনার বন্ধু। ওয়েবসাইটের প্রোডাক্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনার ভিজিটররা যদি কোনো সমস্যার মুখোমুখি হয়, বা আপনার ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহ করে তাহলে বিক্রির পরিমান অনেক কম হবে। প্রোডাক্ট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কাস্টমার কোন পর্যায়ে এসে অর্ডার ক্যান্সেল করছে, কোথায় প্রসেস স্লো, কোথায় তারা বিরক্ত বোধ করছে এ বিষয়গুলো খেয়াল রেখে আপনার ওয়েবসাইটের অর্ডার প্রসেস নতুন করে সাজাতে হবে। এফিলিয়েট লিংক হলেও আপনার লিংক প্লেসমেন্ট এবং পরবতি ধাপগুলো মাথায় রাখতে হবে।
৮. ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
প্রতিনিয়তই আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাকিং এর খবর শুনছি। এতে কাস্টমার কোনো ওয়েবসাইটে তাদের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্রয়ের ক্ষেত্রে আরও সাবধানতা অবলম্বন করছে। তাই ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, আপনার ওয়েবসাইট ভিজিটর এবং কাস্টমারের তথ্য নিরাপদ রাখা আপনার অন্যতম দায়িত্ব। ওয়েবসাইট নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হলেই কাস্টমার স্বাচ্ছন্দে কেনাকাটা করতে পারবে।
৯. ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন চেক করা
ডোমেইন রিনিউ এর ব্যাপারটি খুব ছোট বিষয় হলেও, এটি কোনো কারনে ভূলে গেলে তা ব্যাবসার অনেক বড় সমস্যার সৃস্টি করতে পারে। তাই প্রতি বছরেই সময় করে আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন রিনিউয়াল নিশ্চিত করতে হবে। আপনি চাইলে ডোমেইন এর অটো-রিনিউয়াল অপশন চালু রাখতে পারেন যাতে তা আপনার ডোমেইন আরও বাধাহীনভাবে চালাতে ও মনে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া পরবর্তিতে ব্র্যান্ড চেন্জিং এর জন্য আপনার যদি কোনো পরিকল্পনা থাকে, তার জন্যও ডোমেইন এখনই কিনে রাখতে পারেন যদি তা এভেইলেবল থাকে।
১০. ব্র্যান্ড কমিউনিটিতে ইনভেস্টমেন্ট বাড়ানো
ওয়েবসাইটের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কমিউনিটি তে মনোযোগ দেওয়া। আপনার কনটেন্ট এ ভিজিটরদের কমেন্ট এ নিয়মিত সময় নিয়ে রিপ্লাই দিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্র্যান্ড কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য সকল কমেন্ট ও ম্যাসেজ এ দ্রুত এবং প্রানবন্ত উত্তর দেওয়া চেষ্টা করুন। ওয়েবসাইট রিভিউ ও কাস্টমার পোস্টে কমেন্ট করুন এবং নেগেটিভ রিভিউ এর যথাযথ ভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। সবসময় কাস্টমারদের সাথে পজিটিভ সম্পর্ক বজায় রাখুন।
নতুন বছরে ব্যাবসা ও ব্যাক্তিগত প্রবৃদ্ধির জন্য অনেক কিছুই পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে আপনার ব্যাবসার মূল প্রাণশক্তি- আপনার ওয়েবসাইটকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলতে এই ওয়েবসাইট অপটিমাইজেশন গাইড এ দেওয়া বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন, এসইও করার পর আপনার ডোমেইন অথোরিটি জানতে ভুলবেন না! এ সম্পর্কিত যে কোনো প্রশ্ন বা মতামত কমেন্টে জানান। Happy New Year 2019!